করোনা মহামারির কারণে দেশের শিক্ষা খাতে বড় ক্ষতি হয়েছে। আবার ওই মহামারির সময়ই স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছিল। কিন্তু এরপরও বাজেটে এই দুটি খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার একটি। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকেরা নিজেরা সংস্থান করেন। উন্নয়ন খাতের বরাদ্দে অবশ্য সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের চেয়ে রাস্তাঘাট, জ¦ালানি খাতকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শীর্ষ তিনটি খাতের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত নেই। বরাদ্দ পাওয়ার বিবেচনায় শীর্ষ তিন খাত হলো স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ। এই তিন খাতই এডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছে। কারণ, জনতুষ্টির এসব প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন সহজে দৃশ্যমান হয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী এডিপিতে শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, যা মোট এডিপির প্রায় ১২ শতাংশ। অথচ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ খাতে মোট এডিপির সাড়ে ১৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল। গত পাঁচ বছরের বাজেট বরাদ্দ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সরকার শিক্ষা খাতের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দেও বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। করোনার পর স্বাস্থ্য বাজেট বাড়ানোর বিষয়ে নানা আলোচনা হলেও বাস্তব অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাজেটের ৫ শতাংশ ও জিডিপির ১ শতাংশের মধ্যে আটকে আছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, স্বাস্থ্য খাতে একজন বাংলাদেশি যত টাকা খরচ করেন, তার দুই-তৃতীয়াংশই (৩৯ ডলার) খরচ করেন নিজের পকেট থেকে। অথচ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে মাথাপিছু চিকিৎসা খরচ অন্তত ৮৮ ডলার হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক কার্যক্রম সক্রিয় করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে। দিতে হবে শূন্য পদে লোকবল। এছাড়াও শিক্ষা ক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতাও দরকার। যেখানে বিনিয়োগ করলে লাভের ভাগ বেশি হবে, সেখানেই বিনিয়োগ করা দরকার। বাজেটে প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত।
